বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা) শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের বয়স ৩৫ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আদালতের নির্দেশনা ও নতুন এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী চাকরির বয়স নির্ধারণ করতে গতকাল রোববার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। সেখানেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা একমত হয়েছেন। আগামী সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে আরেকটি সভা করে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। সমকাল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরির কোনো বয়সসীমা বর্তমানে নির্ধারণ করা নেই। তবে অবসরের বয়সসীমা নির্ধারণ করা আছে। অবসরের আগের দিন পর্যন্তও চাকরি পেতে পারেন তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আদালত ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ’কে (এনটিআরসিএ) বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরিতে যোগদানের বয়সসীমা নির্ধারণ করতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী, এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় যোগদানের বয়সসীমা ৩৫ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহমেদের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এএমএম আজাহার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর মো. মাহাবুবুর রহমান, যুগ্ম সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়) সালমা জাহানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে যুগ্ম সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়) সালমা জাহান বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরির বয়স নির্ধারণে আদালতের নির্দেশনা ছিল। সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ নির্ধারণ করে এমপিও নীতিমালা করা হয়েছে। এ নীতিমালা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন দিয়েছে। ১৫তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে এটি কার্যকর হবে।’
জানা গেছে, সারা দেশের সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে নারী-পুরুষের আলাদা তালিকা তৈরি করতে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগবঞ্চিত কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী সম্প্রতি হাইকোর্টে রিট করেন। ২৫০টি মামলার কারণে গত দুই বছর ধরে আটকে যায় শিক্ষক নিয়োগ। গত ১৪ ডিসেম্বর ১৬৬টি মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে সাতটি নির্দেশনা দেয়া হয়।
এর মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ করা, প্রতি বছর নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন, তিন মাসের মধ্যে জাতীয়ভাবে নিবন্ধিত সব শিক্ষকের একটি মেধা তালিকা প্রণয়ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃত শিক্ষকদের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যোগদান করতে দেওয়া না হলে ৬০ দিনের মধ্যে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি বাতিল করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সংশ্নিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পুনরায় নতুন কমিটি গঠন করতে বলা হয়। আদালতের এ রায়গুলো বাস্তবায়ন করতে এনটিআরসিএ সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব পাঠায়।
এনটিআরসিএর সদস্য মো. হুমায়ূন কবির বলেন, গত ১১ এপ্রিল আমরা আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেয়েছি। রায়ে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় সভা করেছে। শিক্ষকদের যোগদানের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হলে নিবন্ধিত প্রার্থীদের মেধা তালিকা প্রণয়ন কাজ শুরু করা হবে। ৯০ দিনের মধ্যে মেধা তালিকা তৈরি করে সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে।
সূত্র জানায়, আদালতে মামলাজনিত কারণে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগে সুপারিশ করা হলেও তাদের নিয়োগ দিতে পারেনি এনটিআরসিএ। যে কারণে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।